দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় - ওজন বাড়ানোর ১০টি টিপস

দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় শুধু বেশি খাওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, আছে আরো কিছু চমকে দেওয়ার মতো গোপন কৌশল! আপনি জানেন না এমন ১০টি কার্যকর টিপস রয়েছে যা বদলে দিতে পারে আপনার শরীরের গঠন। স্বাস্থ্য নষ্ট না করে ধাপে ধাপে ওজন বাড়াতে চাইলে, এখনই বিস্তারিত জানুন।
দ্রুত-ওজন-বৃদ্ধির-উপায়
এখানে এমন কয়েকটি উপায় তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো আপনি আগে কখনো গুরুত্ব দিয়ে ভাবেননি। খাবার তালিকা, ঘুম, স্নাক্স, হজম শক্তি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কিছু ছোট অভ্যাস- সবকিছু ঠিকঠাক মেনে চললেই আপনি খুব সহজে ওজন বাড়াতে পারবেন, তাও স্বাস্থ্য বজায় রেখে।

সুচিপত্রঃ দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় - অজানা ১০ টি টিপস 

দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় গুলো জানলে অবাক হবেন

দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় খুজছেন? অনেকেই হাজার চেষ্টা করেও ওজন বাড়াতে পারেন না। কিন্তু আপনি কি জানেন, এর পেছনে কিছু অদৃশ্য কারণ কাজ করে যাচ্ছে? খাবারের পুষ্টি না থাকা, প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ না করা ইত্যাদি সাধারণ বিষয়ক প্রভাব ফেলে। তাছাড়া দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ এইসব বিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। শরীর তখন প্রয়োজনীয় ক্যালোরি ধারণ করতে পারে না।  

অনেকেই হরমোনের সমস্যার কারণে ওজন বাড়াতে পারেন না বিশেষ করে হাইপারথাইরয়েডিজম হলে ওজন হঠাৎ কমতে থাকে।নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি না পান করলে হজমে সমস্যা হয় এবং খুধা ও কমে যায়। এর ফলে আপনার ওজন ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। তাই ওজন বাড়াতে চাইলে প্রথমেই এসব কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। সমস্যা ধরতে পারলে সমাধান সহজ হয়।

অনেক সময় শরীরের বিপাকক্রিয়া অতিরিক্ত সক্রিয় থাকলে শরীর যতই খাওয়াদাওয়া করুক না কেন, সব ক্যালোরি পুড়ে যায়। ফলে ওজন বাড়ে না বরং কমে যেতে থাকে। এই সমস্যা জন্মগতভাবে থাকতে পারে, আবার অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব বা ব্যায়ামের ধরণ পরিবর্তনের কারণেও বিপাকপ্রক্রিয়া বাড়তে পারে। কেউ কেউ আবার ব্যায়াম না করলেও শুধু মানসিক উদ্বেগের কারণে ক্যালোরি বার্ন করে ফেলেন তারা বুঝতেই পারেন না কীভাবে ওজন কমছে।

শরীরের ভেতরের কিছু রোগ যেমন পরজীবী সংক্রমণ, অন্ত্রের সমস্যা বা হরমোনজনিত রোগের কারণে খাবার ঠিকভাবে হজম না হয়ে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। এতে পুষ্টির ঘাটতি হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। বিশেষ করে যাদের দীর্ঘদিন ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় তারা পুষ্টিকর খাবার খেলেও শরীর তেমন সাড়া দেয় না।

অনেকেই ভুলভাবে ধারণা করেন, ওজন না বাড়ার একমাত্র কারণ খাওয়া কম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ওজন বাড়াতে কেবল খাওয়ার পরিমাণ নয়, খাওয়ার সময়, ঘুমের পরিমাণ, মানসিক চাপ, হজমক্ষমতা, এমনকি শরীরচর্চার ধরনও বড় ভূমিকা রাখে। কোনো একটিতে গড়বড় থাকলেই শরীর ভারসাম্য হারায় এবং ওজন বাড়তে চায় না। তাই ওজন বাড়ানোর আগে নিজের শরীর সম্পর্কে জানা এবং কারণ বিশ্লেষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

যেভাবে খাদ্য তালিকা ঠিক করবেন ওজন বাড়াতে

১। ক্যালরি ঘাটতি না বরং ক্যালোরি বেশি তৈরি করুন
ওজন বাড়ানোর জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে-দৈনিক যে পরিমাণ ক্যালরি শরীর ব্যয় করে, তার চেয়ে অন্তত ৩০০-৫০০ ক্যালরি বেশি খাওয়া প্রয়োজন। একে বলা হয় ক্যালোরি সারপ্লাস। একেকজনের সার্বিক গঠন, বয়স ও কাজের ধরন অনুযায়ী ক্যালোরির চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনি যদি ২২০০ ক্যালোরি ব্যয় করে, তাহলে অন্তত ২৫০০ থেকে ২৭০০ ক্যালোরি খেতে হবে। এটি ধীরে ধীরে অতিরিক্ত ওজন আনবে-স্বাভাবিকভাবে ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে।

২।প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য
অনেকে কেবল ভাত বা রুটি খেয়েই ক্যালোরি বাড়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু এতে কেবল চর্বি জমে,পেশি বাড়ে না। তাই খাদ্যতালিকায় তিনটি প্রধান উপাদান রাখতে হবে যথাঃ
  • প্রোটিনঃ ডিম, দুধ, মাংস, মাছ, ডাল, ছোলা
  • কার্বোহাইড্রেটঃ ভাত, আলু, চিড়া, রুটি
  • হেলদি ফ্যাটঃ ঘি, বাদাম, অলিভ অয়েল, মাখন
এই তিন উপাদানের সঠিক অনুপাতে খাদ্য গ্রহণ করলে শরীর শক্তি পায়, পেশি বৃদ্ধি পায় এবং ওজন স্বাস্থ্যকরভাবে বাড়ে।

৩। দিনে ৫-৬ বেলার খাবারের অভ্যাস গড়ুন
ওজন বাড়াতে হলে দিনে মাত্র ৩ বেলা খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। অন্তত ৫-৬ বেলায় ভাগ করে খাবার খেতে হবে। এর মধ্যে ৩টি মূল খাবার সকাল, দুপুর ও রাত এবং ২-৩টি হালকা স্ন্যাকস (সকাল ১১টা, বিকেল ৫টা, ঘুমের আগে) অন্তর্ভুক্ত করুন। নিচে বুঝার সুবিধারতে টেবিল আকারে উপস্থাপন করা হল -এই ধরনের খাদ্যতালিকা নিয়মিত অনুসরণ করলে শরীর ক্যালোরি ও পুষ্টি পায় এবং ওজন বাড়ে।
সময় খাবার মন্তব্য
সকাল ৮টা ডিম, কলা, দুধ শক্তিশালী নাশতা
সকাল ১১টা বাদাম, ছোলা হেলদি স্ন্যাকস
দুপুর ২টা ভাত, ডাল, মাছ ভারী লাঞ্চ
বিকাল ৫টা চা, চিড়া-দুধ বিকেলের খাবার
রাত ৯টা রুটি ও ডিম বা মাংস পুষ্টিকর রাতের খাবার

৪। প্রতিটি খাবারে ভিন্নতা রাখুন ও পুষ্টিগুণ বাড়ান
একই খাবার প্রতিদিন খেতে খেতে অনেকে বিরক্ত হয়ে যান এবং নিয়ম ভেঙে ফেলেন। তাই খাদ্যতালিকায় ভিন্নতা আনুনঃ

  • মাঝে মাঝে স্যুপ বা স্মুদি যুক্ত করুন
  • পনির বা চিজ দিয়ে রুটি/স্যান্ডউইচ তৈরি করুন
  • সেদ্ধ ডিম বা ভেজানো বাদাম স্ন্যাকস হিসেবে ব্যবহার করুন

    এতে করে খাবার একঘেয়ে লাগবে না এবং পুষ্টিও বজায় থাকবে।

    ৫। প্রতিদিন পানি পান এবং হজম ঠিক রাখা জরুরী

    খাবার ঠিকভাবে হজম না হলে ওজন বাড়বে না। তাই পর্যাপ্ত পানি পান (দিনে অন্তত ২.৫-৩ লিটার) করতে হবে। সাথে সাথে হালকা হাঁটাচলা, ছোলা বা টক দই জাতীয় প্রোবায়োটিক খাবার রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।হজম ভালো থাকলে শরীর ক্যালোরি ও পুষ্টি ভালোভাবে শোষণ করতে পারবে, যা দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

    গোপন  সুপারফুডগুলো ওজন বাড়াতে করে সাহায্য

    ওজন বাড়াতে আমরা অনেক সময়ই সাধারণ খাবারের দিকে নজর দিই, যেমন ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি। কিন্তু কিছু বিশেষ সুপারফুড আছে, যেগুলো অনেকেই জানেন না, অথচ এগুলো দ্রুত ও স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়াতে অসাধারণ কার্যকর। এই সুপারফুডগুলোতে এমন সব উপাদান থাকে যা শরীরকে পুষ্টি দেয়, হজম শক্তি বাড়ায়, এবং পেশির গঠন মজবুত করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু গোপন সুপারফুড সম্পর্কে, যেগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে ওজন বাড়ানো সহজ হয়।

    ১। খেজুর
    খেজুর শুধুই রোজার সময়ের খাবার নয়, এটি একটি শক্তিশালী ওজন বাড়ানো সুপারফুড। এতে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ), আঁশ, এবং মিনারেল থাকে। দিনে ৫-৬টি খেজুর এক গ্লাস দুধের সাথে খেলে আপনি পেয়ে যাবেন অতিরিক্ত ক্যালোরি ও তাৎক্ষণিক শক্তি। এটি হজম শক্তি বাড়ায় ও ক্ষুধা বাড়াতে কাজ করে।

    ২। চিনাবাদাম ও বাদামজাতীয় খাবার
    চিনাবাদাম, কাজু, আখরোট, পেস্তা এগুলো সবই হাই ক্যালোরি, হেলদি ফ্যাট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। অল্প পরিমাণেই অনেক পুষ্টি সরবরাহ করে। এগুলো শুধু পেশি তৈরি করতে সহায়তা করে না, বরং ওজনও দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার স্ন্যাকস হিসেবে প্রতি দিন একমুঠো বাদাম রাখুন। মাখন বা চিজ দিয়ে বাদাম খেলে ক্যালোরি বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

    দ্রুত-ওজন-বৃদ্ধির-উপায়
    ৩। ঘি ও ঘরের তৈরি মাখন
    অনেকেই মনে করেন ঘি ও মাখন খেলে শরীর খারাপ হয়। তবে সত্য হলো, সীমিত পরিমাণে এই ধরনের হেলদি ফ্যাট খেলে তা ওজন বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক। ঘি-র ভিতরে থাকে CLA (Conjugated Linoleic Acid) যা ফ্যাট শোষণে সাহায্য করে এবং বিপাক হার বাড়ায়।

    ৪। কলা ও দুধের স্মুদি 
    কলা ও দুধ একত্রে খাওয়া ওজন বাড়ানোর জন্য একটি প্রাকৃতিক কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর পন্থা। কলায় থাকে প্রাকৃতিক শর্করা ও ফাইবার, আর দুধে থাকে প্রোটিন ও ফ্যাট। একসাথে এই দুইটি খাদ্য মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করলে তা হয় উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত এবং সহজে হজমযোগ্য।

    ৫। অ্যালোভেরা জুস ও অশ্বগন্ধা পাউডার
    এই দুটি আয়ুর্বেদিক উপাদান অনেকের কাছেই অপরিচিত, কিন্তু স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির পেছনে এদের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। অ্যালোভেরা হজম শক্তি বাড়িয়ে পুষ্টি শোষণ বাড়ায়, আর অশ্বগন্ধা হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে পেশির বৃদ্ধি সহায়ক করে।

    ৬। ডিমের কুসুম 
    অনেকেই ওজন কমানোর জন্য ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশ খান। কিন্তু ওজন বাড়াতে চাইলে ডিমের কুসুম অত্যন্ত দরকারি। এতে থাকে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন A, D, E, ও খনিজ। দিনে অন্তত ২টি ডিমের কুসুম সহ খেলে পেশি গঠনে সহায়তা করে এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।

    ৭। ওটস ও দুধের কম্বিনেশন
    ওটস হলো ধীরে হজম হওয়া কার্বোহাইড্রেট যা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি দুধ, মধু, চিয়া সিডস, বাদাম ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে খেলে একটি উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন সুপারফুডে পরিণত হয়। ওজন বাড়াতে প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে এটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন।

    এই সুপারফুডগুলো কেবল দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় ই নয়, বরং শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী ও সুস্থ করে তোলে। এগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে আপনি শুধু ওজনই নয় পেশিশক্তি, হজমক্ষমতা এবং মানসিক উদ্যমও বাড়াতে পারবেন। তবে যেকোনো সুপারফুড গ্রহণের আগে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া ভালো।

    প্রোটিন ছাড়া ওজন বাড়ানোর শুধু ক্যালরি নয়

    ওজন বাড়াতে হলে বেশি ক্যালরি খেতে হবে, এটি অনেকেরই জানা। কিন্তু অনেকেই ভুলে যান, ওজন বাড়ানো মানে শুধু ক্যালোরি নয়, বরং সেই গুণগত মানব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শুধু তেল মসল্‌ চিনি, আর ফাস্টফুড খেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে্‌ তাহলে হয়তো ওজন বাড়বে ঠিকই, কিন্তু তা হবে চর্বিযুক্ত দুর্বল এবং স্বাস্থ্যহানিকর।

    এখানেই প্রোটিনের গুরুত্ব। প্রোটিন শুধু পেশী গঠনের সহায়তা করে না, বরং তা শরীরের কোষ গঠনে, হরমোন নিয়ন্ত্রণে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই প্রোটিন ছাড়া শুধু কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি খেয়ে ওজন বাড়ানো হলে, শরীরে মেদ বাড়ে কিন্তু বেশি শক্তি বাড়ে না। এর ফলে দেখা দিতে পারে ক্লান্তি, মেদ বহুলতা ও পরবর্তীতে নানা রোগের ঝুঁকি ।
    কেন ক্যালরি একা যথেষ্ট নয়?
    ১। শুধু কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি গ্রহণ করলে শরীরটা শক্তি হিসেবে জমিয়ে রাখে, যা পরবর্তীতে অতিরিক্ত মেয়েদের রূপ নেয়।
    ২। প্রোটিনের অভাবে শরীরের কোষ পুনর্গঠন ব্যাহত হয়। ফলে ওজন বাড়লেও তা সুস্থ বা ফিটনেস প্রতীক হয় না।
    ৩। মাংসপেশি গঠনের জন্য প্রোটিন অত্যাবশ্যক। কারণ ওজন বাড়ানো মানে শুধু শরীর মোটা করা নয় বরং সুস্থভাবে বেশি বৃদ্ধি করাও লক্ষ্য হওয়া উচিত।

    কতটা প্রোটিন জরুরী?
    সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতি কেজি ওজনের অনুযায়ী দিনে ১ থেকে ১.৫ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত, যদি লক্ষ্য হয় পেশী তৈরি ও স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি। উদাহরণস্বরূপ, কারো ওজন যদি ৫০কেজি হয়, তবে তার প্রতিদিন প্রয়োজন ৫০থেকে ৭৫গ্রাম প্রোটিন।

    প্রোটিন না খেলে কি সমস্যা হয়?
    • শরীর জড়তায় ভরে যায়
    • পেশিশক্তি কমে যায়
    • হজম শক্তি দুর্বল হয়
    • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়
    • ত্বক, চুল ও নখের গুণগত মান খারাপ হয়
    • দীর্ঘমেয়াদে মেদবহুলতা ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হতে পারে
    উপাদান প্রতিদিনের মোট ক্যালোরির কত শতাংশ হওয়া উচিত
    কার্বোহাইড্রেট ৫০–৬০%
    প্রোটিন ২০–৩০%
    ফ্যাট
    ১৫–২৫%

    প্রোটিন না খেয়েও ওজন বাড়ানোর চিন্তা -ভুল সিদ্ধান্ত কেন ?

    অনেকে গরুর মাংস, মাছ বা ডিম পছন্দ না করায় প্রোটিন এড়িয়ে চলে। আবার কেউ কেউ ভেবে নেয়, "আমি তো শুধু মোটা হতে চাই, পেশি চাই না!" এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ পেশি না বাড়িয়ে যদি শুধু চর্বি বাড়ানো হয়, তবে ওজন বাড়লেও তা হবে স্বাস্থ্যহানিকর। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি প্রতিদিন চিপস, কেক, মিষ্টি ইত্যাদি খেয়ে যদি ক্যালোরি বাড়ান, তাহলে তার পেটে, কোমরে চর্বি জমে যাবে। কিন্তু সে ক্লান্ত বোধ করবে, হজমে সমস্যা হবে, রোগপ্রতিরোধ কমে যাবে।

    অন্যদিকে, সুষমভাবে প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান খেলে পেশিশক্তি বাড়বে, শরীরের গঠন ভালো হবে এবং ওজনও ভালভাবে বাড়বে।

    এই নিয়ম মেনে খাবার খেলেই বাড়বে ওজন

    ওজন বাড়াতে হলে শুধু বেশি খাওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইচ্ছামত যা খুশি খাওয়া মানে শরীরের বিপাকে বিঘ্ন ঘটানো। খাবার সময়মতো না খেলে শরীর সঠিকভাবে পুষ্টি শোষণ করতে পারে না।প্রতিদিন তিন বেলার প্রধান খাবার এবং দুইবার স্ন্যাকস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে শরীর পর্যাপ্ত ক্যালোরি পাবে এবং ক্ষুধার্তও থাকবে না।একবারে অনেক খাবার না খেয়ে ছোট ছোট ভাগে বারবার খেলে হজমে সমস্যা হয় না এবং শরীর ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে পারে ।
    এই অভ্যাসটি দীর্ঘমেয়াদে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।

    ১। সময় মত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন
    প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে আধা ঘণ্টার মধ্যে নাশতা খেয়ে নেওয়া উচিত। দুপুর ও রাতের খাবার সময়মতো খেলে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া (metabolism) সঠিকভাবে কাজ করে এবং শরীর পুষ্টি গ্রহণে সক্ষম হয়।
    সঠিক সময়সূচী অনুসরণ করলেঃ
    • ক্ষুধা বাড়ে
    • হজমের সহায়তা করে
    • অতিরিক্ত ক্লান্তিকরমে
    • শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়
    ২। বারবার খাওয়ার অভ্যাস করুন
    ওজন বাড়াতে তিন বেলার খাবারই যথেষ্ট নয়। প্রতিদিনের মূল তিনটি খাবারের পাশাপাশি অন্তত দুই থেকে তিন বার হালকা স্নাক্স খাওয়া উচিত। এর ফলে শরীর সারাদিন ক্যালোরি ও পুষ্টি পায়, যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
    উদাহরণস্বরূপ স্নাক্স হতে পারেঃ
    • সকাল ১১টায় বাদাম, কলা বা টোস্ট
    • বিকেল পাঁচটায় দুধ বা ফল
    • রাতে ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে এক গ্লাস দুধ
    ৩। একবারে বেশি না অল্প অল্প করে খান
    এক বাসায় অতিরিক্ত খাবার খেলে তা হজমের সমস্যা করতে পারে। তার পরিবর্তে ছোট ছোট ভাগে খাবার খেলে শরীর সহজে ক্যালরি গ্রহণ করতে পারে এবং বিপাক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে। এতে গ্যাস বা পেট ভার হওয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
    ভালো অভ্যাসঃ
    • প্রতি তিন থেকে চার ঘন্টা পর পর খাওয়া
    • খাবারের সময় ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া
    • প্রতি খাবারের প্রোটিন ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট এর ভারসাম্য রাখা
    ৪। প্রতিটি খাবারে যেন থাকে সুষম পুষ্টি
    শুধু চাল বা রুটি নয়্‌ প্রতিটি খাবার প্রোটিন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ভিটামিন যুক্ত রাখতে হবে। এতে শরীরের বেশি বাড়ে, শরীর গঠন হয় এবং ক্যালরি বাড়ানো সহজ হয়।
    উদাহরণঃ
    • সকালের নাস্তাই কলা, ডিম, দুধ
    • দুপুরে ভাত, মাছ বা মাংস , ডাল, সবজি
    • রাতে হালকা রুটি বা ভাত, ডিম, সালাদ 
    ৫। খাবারের রেকর্ড রাখুন
    আপনি প্রতিদিন কি খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন এবং কতবার খাচ্ছেন তা লিখে রাখুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন কোন খাবার আপনার জন্য কার্যকর এবং কোনটি নয়। এছাড়া খাবারের হিসাব রাখলে অভ্যাসে শৃঙ্খলা আসে। আপনি চাইলে ফুড জার্নাল বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ক্যালোরি ট্র্যাক করতে পারেন। এটি ওজন বাড়ানোর সাহায্য করবে।

    ওজন বাড়াতে হলে শুধু বেশি খাবো এই চিন্তায় আটকে থাকলে চলবে না। বরং নিয়ম করে সময় মত পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। এই অভ্যাস আপনাকে স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘ মেয়াদ এর টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। 

    ঘুমের এই ভুলগুলো ওজন বাড়াতে দিচ্ছে না

    সঠিক ঘুম না হলে শরীর ওজন বাড়াতে সক্ষম হয় না। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। ঘুমের সময় শরীরে হরমোন নিঃসরণ ঠিকভাবে হয় কোষ মেরামত হয় এবং শক্তি পুনরুদ্ধার হয়। এসব প্রক্রিয়া শরীরকে ভারসাম্য দেয়। ঘুমের অভাব মানসিক চাপ বাড়ায়, যা পার্টিশন হরমোন বাড়িয়ে দেয়। এটি ওজন কমিয়ে দিতে পারে। রাত জেগে থাকলে খাওয়ার রুটিন বিভিন্ন ঘটে, যা ওজন বাড়ানোর পথে বাধা দেয়।
    একটি পাওয়ার ম্যাপ নিলে উপকার হয়, তবে রাতের ঘুমের বিকল্প কিছু নয়। অনেকে হয়তো দীর্ঘ সময় ঘুমান, কিন্তু ঘুম হয় বারবার ভাঙা যাকে বিঘ্নিত ঘুম বলা হয়। এতে শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না, ক্লান্তি থাকে এবং খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যায়। এই অবস্থায় ওজন বাড়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেকেই ঘুমানোর ঠিক আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, নীল আলো নির্গত করে এবং মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। 

    এর ফলে ঘুমে সমস্যা হয় এবং দেহের প্রাকৃতিক ঘড়ি  বিঘ্নিত হয়। নিয়মিত এমন অভ্যাস ওজন বাড়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কম ঘুম যেমন খারাপ, অতিরিক্ত ঘুমাও ওজন বাড়াতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যারা দিনে ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের বিপাক প্রক্রিয়া দুর্বল হতে থাকে এবং সারাদিন ক্লান্ত বোধ করেন। এতে শরীর ঠিকভাবে ক্যালোরি খরচ করতে পারে না এবং শরীর ধীরে ধীরে শক্তি হারাতে থাকে।

    ব্যায়াম না করেও সহজেই ওজন বাড়ানোর কৌশল

    সবাই ব্যায়াম করতে পারেন না। ব্যস্ততা, শারীরিক দুর্বলতা বা ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা করতে পারছেন না। কিন্তু তাই বলে কি ওজন বাড়ানো থেমে যাবে? একেবারেই না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেই ব্যায়াম ছাড়া সহজেই ওজন বাড়ানো সম্ভব।নিচে কিছু কার্যকর কৌশল তুলে ধরা হলো-
    ১। ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
    প্রতিদিন ৫–৬ বার ছোট ছোট খাবার খান। তিনবেলা মূল খাবারের পাশাপাশি সকালে, বিকেলে ও রাতে স্ন্যাকস যোগ করুন। যেমনঃ

    • সকালের নাস্তায় কলা + ডিম
    • দুপুরে ভাত + ডাল + মাংস
    • বিকেলে বাদাম + দই
    • রাতে ভাত + মাছ বা ডিম এভাবে খেলে শরীরে সারাদিন ক্যালোরি সরবরাহ অব্যাহত থাকে। 

    ২। ক্যালোরি অনেক কিন্তু স্বাস্থ্যবান খাবার বেছে নিন

    শুধু বেশি খেলেই হবে না, খেতে হবে উচ্চ ক্যালোরি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। যেমনঃ

    • বাদাম, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম
    • কলা, আম, পেঁপে
    • ঘি, মাখন, অলিভ অয়েল
    • চিজ, দুধ, দই
    • শাকসবজি ও হোল গ্রেইন এসব খাবার শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি দেয় ও ওজন দ্রুত বাড়ায়।
    ৩। পর্যাপ্ত পানি পান করুন
    শরীরে পানি কমে গেলে হজম ব্যাহত হয় এবং খিদেও কমে যায়। তাই প্রতিদিন ২.৫–৩ লিটার পানি পান করুন। তবে খাওয়ার ঠিক আগে পানি খাওয়া এড়িয়ে চলুন, এতে পেট ভরে যায় এবং খাওয়া কমে যায়।

    ৪। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন

    প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম ওজন বাড়ানোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময় শরীরে কোষ পুনর্গঠন হয় ও পেশি তৈরি হয়। ঘুম কম হলে করটিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে ওজন বাড়তে বাধা দেয়।

    ৫। লিকুইড ক্যালরি গ্রহণ করুন

    অনেক সময় খাবার খেতে ভালো লাগে না, তখন শেক, স্মুদি বা প্রোটিন ড্রিঙ্ক হতে পারে বিকল্প। যেমনঃ 

    • কলা + দুধ + বাদাম স্মুদি
    • ওটস + দই + মধু শেক এসব পানীয় সহজে হজম হয় এবং দ্রুত ক্যালোরি সরবরাহ করে।

    ৬। খাবারের প্রোটিন যোগ করুন
    দিও ব্যায়াম করছেন না, তবুও প্রোটিন দরকার। কারণ প্রোটিন পেশি বাড়ায় এবং শরীরের গঠন ঠিক রাখে। প্রতিদিন খাবারে ডিম, মাছ, ডাল, দুধ, চিজ এসব রাখুন।

    প্রতিদিন স্ন্যাকস খাওয়ার মজাদার পরিকল্পনা

    স্ন্যাকস খাওয়ার মাধ্যমে আপনি দিনভর বাড়তি ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারেন। তবে এটি যেন স্বাস্থ্যকর হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সকাল ১১টা ও বিকেল ৫টায় ছোট্ট দুইবার স্ন্যাকস খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন। এতে ক্ষুধা লাগার সময়ও ওজন বাড়বে। স্ন্যাকস হিসেবে কলা, বাদাম, ঘি মাখা রুটি, দুধ, ছোলা ইত্যাদি খেতে পারেন। চিপস, প্যাকেটজাত ফুড নয়—ঘরে তৈরি খাবার বেছে নিন। এতে ওজন বাড়বে, কিন্তু স্বাস্থ্য নষ্ট হবে না। নিয়মিত স্ন্যাকস খেলে মেটাবলিজম ঠিক থাকে এবং খাবারের চাহিদাও পূরণ হয়।
    দিন সকাল ১১টা বিকেল ৫টা রাত ৯টার পরে (ঐচ্ছিক)
    রবিবার কলার স্মুদি বাদাম ও খেজুর গ্রিক দই + মধু
    সোমবার ডিম স্যান্ডউইচ ফল ও চিজ কিউব চিকেন স্যুপ
    মঙ্গলবার ওটস স্মুদি পিনাট বাটার + টোস্ট ডার্ক চকলেট
    বুধবার আম-মিল্কশেক মিক্সড বাদাম ফল দিয়ে পুডিং
    বৃহস্পতিবার চিজ+ফ্রুট সালাদ ওটস বার  হট চকোলেট
    শুক্রবার সুজি দুধ দিয়ে চিকেন রোল ড্রাই ফ্রুট বার
    শনিবার ফ্রুট স্মুদি পনির স্যান্ডউইচ পিনাট বাটার কুকি

    হজম শক্তি না বাড়ালে ওজনও বাড়বে না

    হজম ঠিক না থাকলে যতই খাওয়াদাওয়া করুন, শরীর পুষ্টি নিতে পারবে না। ফলে ওজনও বাড়বে না।প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন এবং হালকা ব্যায়াম করুন। এতে হজম শক্তি উন্নত হয়।প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার যেমন টক দই, আচার, ভেজানো ছোলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। গ্যাস,অম্বল বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা দ্রুত চিকিৎসা করুন। এসব সমস্যা হজমে বাধা দেয়। হজম শক্তি ভালো থাকলে খাওয়ার পুষ্টিগুণ ঠিকভাবে কাজে লাগবে এবং ওজন স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
    খাবার খেলেই কিন্তু শরীর সব পুষ্টি পায় না। পুষ্টি শরীরে পৌঁছাতে হলে সেটি ঠিকভাবে হজম হওয়া চাই। আপনার পেটে যদি এনজাইম, অ্যাসিড, এবং গ্যাস্ট্রিক কার্যক্রম দুর্বল হয়, তবে যতই স্বাস্থ্যকর খাবার খান না কেন, শরীর তা গ্রহণ করতে পারবে না। ফলে আপনি কেবল খাচ্ছেন, কিন্তু বাড়ছে না ওজন। কবার হজম শক্তি ঠিক হলে শরীর ধীরে ধীরে খাবারের পুষ্টি গ্রহণ করতে শুরু করে। এতে পেশি গঠন বাড়ে, চর্বি সঠিকভাবে জমে, এবং ওজনও বৃদ্ধি পেতে থাকে সুস্থভাবে, কৃত্রিম উপায়ে নয়।

    সারাজীবন ধরে রাখতে চাইলে এই অভ্যাসগুলো বজায় রাখুন

    ওজন বাড়ানো একটি ধৈর্যের বিষয়। কিন্তু যেটুকু ওজন বাড়েছে, তা ধরে রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়েই খাওয়া, ঘুমানো এবং হালকা চলাফেরার অভ্যাস বজায় রাখুন। পানি খাওয়া, স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস, পুষ্টিকর খাবার এসব যেন রুটিনের অংশ হয়। একবার ওজন বাড়লে অনেকে আগের অভ্যাসে ফিরে যান, ফলে আবার কমে যায়। এটা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওজন বাড়লে তা সহজে কমে না, বরং দীর্ঘসময় টিকে থাকে।

    ওজন বেড়ে গেলে অনেকেই ডায়েট থেকে প্রোটিন বা ফ্যাট বাদ দেন। এটা একেবারেই করা যাবে না। আপনার ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের সঠিক ভারসাম্য থাকতে হবে। ওজন ধরে রাখতে হলে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করুন। এটি শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে দেয় না।
    দ্রুত-ওজন-বৃদ্ধির-উপায়
    প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম এবং চাপমুক্ত মন এই দুটোই ওজন ধরে রাখার পেছনে ভূমিকা রাখে। মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ওজনের ওপর প্রভাব ফেলে। একটি ছোট ডায়েরি বা অ্যাপ ব্যবহার করে ট্র্যাক করুন আপনি প্রতিদিন কী খাচ্ছেন, কতটা চলাফেরা করছেন ও ওজন কোন অবস্থায় আছে। এতে পরিবর্তন বুঝতে সহজ হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। 

    শেষকথাঃ দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় মেনে চলুন উপকার পাবেন

    দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় মেনে চলার জন্য শুধু খাওয়াদাওয়া বাড়ালেই হবে না, প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান, ধৈর্য এবং পরিকল্পিত অভ্যাস। এই ব্লগে আমরা এমন সব “ওজন বাড়ানোর দ্রুত উপায়” নিয়ে আলোচনা করেছি যা শুধু ক্যালোরি বাড়ানো নয়, বরং শরীরের স্বাস্থ্যকর বিকাশকে গুরুত্ব দেয়।আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে কম ওজনের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে এখান থেকে পাওয়া তথ্য ও পরামর্শগুলো আপনার জন্য গেমচেঞ্জার হতে পারে।

    তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা তাই কারো রুটিন বা অভ্যাস হুবহু অনুকরণ না করে নিজের শারীরিক অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওজন বাড়ানোর যাত্রাটি উপভোগ করুন, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং প্রতিদিন ছোট ছোট অগ্রগতি উপভোগ করুন। একসময় দেখবেন, আপনি নিজেই আপনার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছেন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি